ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। লালবাগে জামেয়া কুরআনিয়া মাদ্রাসার পাশে তিনি চির নিন্দ্রায় শায়িত হলেন।এর আগে আজ (বুধবার) বিকেল সাড়ে তিনটায় জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত জানাযার নামাযে ইমামতি করেন লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হাই। জানাযার আগে মুফতি আমিনী বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের নেতারা। পরে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় তার অনুসারিরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
জানাজায় ইসলামী বিভিন্ন দলসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতারাসহ লক্ষাধিক মুসুল্লি অংশ নেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, এমকে আনোয়ার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ।
এছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, চরমোনাইয়ের পীর মাওলানা রেজাউল করীম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা ইসহাক, মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে ঈদগাহ মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার সময় কওমী মাদ্রাসার বেশ কিছু ছাত্র মুফতির আমিনীর মৃত্যুর জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। তারা দাবি করেন, সরকারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেই মুফতি আমিনীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুফতি আমিনী। রাত সোয়া ৯টার দিকে হঠাত করেই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। প্রাথমিক চিকিতসার পর রাত সোয়া ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মুফতি আমিনীর মৃত্যুতে ১৮ দলীয় জোট ও আলেম সমাজের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুফতি আমিনীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘দেশবরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফজলুল হক আমিনীর অবদান এ দেশের মানুষ কখানো ভুলে যাবে না। বর্তমান আওয়ামী সরকারের অপশাসন ও অপকীর্তির বিরুদ্ধে মাওলানা আমিনীর কণ্ঠস্বর ছিল সাহসী ও মানুষের মৌলিক অধিকারের পক্ষে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কোনো অন্যায় বা অসত্যের সঙ্গে আপোষ করেননি। প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে তিনি মানুষকে ন্যায় ও কল্যাণের পথে আহবান করতেন।’’
বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আমিনীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল বলে শোকবাণীতে অভিযোগ করেছেন বেগম জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সন মাওলানা ফজলুল হক আমিনীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্য, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
মুফতি আমিনী বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট থেকে তিনি ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত দেড় বছর ধরে লালবাগ মাদ্রাসা সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে তিনি অঘোষিত গৃহবন্দী ছিলেন। ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ছোট ছেলে মাওলানা আবুল হাসনাত অপহরণের পর ১২ এপ্রিল জোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী মুফতি আমিনীর পক্ষে নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। আমিনীর নিরাপত্তার আবেদন কৌশল হিসেবে নিয়ে তাকে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়। প্রায় ১৩ মাস গৃহবন্দী থাকার পর গত ১৫ মে পটিয়া মাদ্রাসার বিশিষ্ট আলেম শাহ মোহাম্মদ আইয়ুবের জানাজায় অংশ নিতে পুলিশ প্রহরায় চট্টগ্রাম যান তিনি। জানাজা শেষে ওই দিনই তিনি ঢাকা ফিরে আসেন।
গত শতকের ৮০ দশকে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে মুফতি আমিনীর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। পরে তিনি খেলাফতে ইসলামী নামে আলাদা দল গড়েন এবং এর চেয়ারম্যান হন। তিনি ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ছিলেন। মুফতি আমিনী লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়া এবং বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসা ছাড়াও অসংখ্য দীনি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।
Mufti Amini laid to rest (চির নিদ্রায় শায়িত হলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী)
Reviewed by Good One
on
4:47 AM
Rating: